Sunday, December 30, 2018

গল্পঃআপুর বিয়ে(সত্য ঘটনা অবলম্বনে) পর্বঃ০৭ (সমাপ্ত পর্ব)

গল্পঃআপুর বিয়ে(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
পর্বঃ০৭ (সমাপ্ত পর্ব)
আমি আর আমার কাজিন আপুর শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে আজকে আর বাইরের গেইট টাতে তালা ঝুলতে দেখিনি। আমরা ধাক্কা দিয়ে গেইট খুলে ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে ঢুকে দেখলাম বারান্দায় যেই গেইটটা আছে ঐ গেইটেটা ভেতর থেকে লক করা। কিন্তু আমরা কোন মানুষ দেখতে পাই নি। কিন্তু এতোটুকু বুঝতে পারি রুমের ভেতরে মানুষ আছে। কারণ রুমে লাইট জ্বলছিলো এবং ভেতর থেকে টিভির আওয়াজ আসছিলো। তখন আমরা গেইটে নক করি কয়েকবার জোরে জোরে নক করি। কিন্তু কেউ এসে গেইট খুলছিলো না। অবন্তী আপু বলে কয়েকবার ডাক দিলে কান খাড়া করলে শুনতে পেলাম আপু বলছে প্লিজ দরজাটা খুলতে দাও আমার ভাই এসছে মনে হচ্ছে । কিন্তু ঐ পাষান লোকটি আপুকে আসতে দিচ্ছিলো না। আমরা গেইটের বাইরে থেকে আপুর স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলি "তোর খবর আছে,বাড়ি গিয়ে তোর বারোটা বাজাবো"। তাও সে বাইরে আসে নি। অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর আমরা বাড়ি ফিরে এসে সবাইকে সবকিছু খুলে বলি।
তখন সিদ্ধান্ত হয় আপুর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে এবং আপুকে ঐ বাড়ি থেকে চিরদিনের জন্য নিয়ে আসা হবে। ঐ দিন রাতেই আপুর ফোন আসে আপুর স্বামী তখন বাড়ি ছিলো না দেখে আপু আপুর শ্বাশুড়ির ফোন নিয়ে ফোন করে। মা বললো তোর বাবা এসে তোকে কাল ই নিয়ে আসবে। তখন আপু মাকে বাবাকে পাঠানোর জন্য নিষেধ করে। কারন আপু বলতেছিলো যেহেতু আসছি আর কিছুদিন থেকে দেখি তার কোন পরিবর্তন হয় কি না। পরিবর্তন না হলে আমি তোমাদেরকে বলবো তখন তোমরা এসে আমাকে নিয়ে যেও। আপু ঐদিন ফোনে অনেক কান্না করে এই জন্য যে আমি আপুর ভাই আপুর শ্বশুরবাড়ি গেলাম আর আপু আমার বোন হয়ে আমাকে দেখার আমাকে ভেতরে গিয়ে বসতে বলার সামর্থ্যটুকুও আপুর হয় নি.......
তার পর কেটে যায় ১৫ দিন এই ১৫ দিনে আপু একবার ফোন করে বলেছিলো আগের চেয়ে কিছুটা ভালো আছে। ১৫ দিন পর আপু ফোন করে বলে আপু আর থাকতে পারছে না এবং বাবাকে পাঠানোর জন্য।
পরদিন ভাইয়া বাবা আরো কয়েকজন এবং আমার একজন খালাতো ভাই সে ছিলো সাংবাদিক এই কয়জন মিলে আপুর শ্বশুরবাড়ি যায়। তাদের দেখে আমার গুণবান খুব দুলাভাই রেগে যায়। উল্টাপাল্টা বলা শুরু করলে আপুর শ্বশুর তাকে থাপ্পড় দিয়ে চুপ করায়। তখন সবার সামনে আপুকে এবং তার স্বামী এবং শ্বশুর শ্বাশুড়িকে ডাকা হয়। তখন আপুর স্বামীকে জিগ্যেস করা হয়ে আপুকে দ্বিতীয়বার আনার সময় তাকে যেই নিয়মগুলি দেয়া হয় ঐ নিয়মগুলি কি সে পালন করেছে কি না?
তখন সে সবাইকে অবাক করে দিয়ে তার বাবা মা এবং উপস্থিত সবার সামনেই আমার বাবার পায়ে ধরে মাফ চাওয়া শুরু করে। বাবা তাকে পা থেকে সরিয়ে দেয়। তখন আপুকে জিগ্যেস করা হয় সে কি আর এই বাড়িতে থাকবে কি না? আপু উত্তর দেয় না। তখন আবার আবির ভাই(আপুর স্বামী) আপুর পায়ে ধরে মাফ চাওয়া শুরু করে। আপু তাকে জোর করে পা থেকে সরিয়ে দাঁড় করায়।
ঐ দিন ই আপু ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করে আবির ভাইকে ডিভোর্স দিয়ে চলে আসে এবং সে যেনো আর কখনো আপুকে ডিস্টার্ব না করার জন্য বলা হয়। আমার সাংবাদিক ভাই তাকে বলে আসে যদি কখনো আপুকে ডিস্টার্ব করে তাহলে তার সকল অত্যাচার এর বর্ণনা তার ছবিসহ পত্রিকায় ছাপানো হবে।
তারপর আপুকে বাড়ি নিয়ে আসা হয় প্রথম প্রথম আপু বেশিরভাগ সময় কান্না করতো। আমার আপু অনেক চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো। বেশিরভাগ সময় একা একা থাকতো। আর আপুর স্বপ্ন ছিলো বিসিএস ক্যাডার হবে। বিসিএস এর বই কিনে পড়াও শুরু করে দিয়েছিলো। কিন্তু আবির ভাই এর সাথে যখন আপুর বিয়ে হয় তখন আপু অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলো এবং বিসিএস এর প্রিপারেশন নেয়া শুরু করেছিলো। কিন্তু একজন ভুল মানুষের হাত ধরার পরিণতি স্বরুপ আপুর জীবনে এতো কিছু হয়ে যায়। বিয়ের পর আপুর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় এমনকি আপুর অনেক কাগজপত্রও আপুর স্বামী পুড়িয়ে দিয়েছিলো।
আপু এখন আবার মাস্টার্সে ভর্তি হবার চিন্তাভাবনা করছে পাশাপাশি ভাইয়ার পরিচিত একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জবে ঢুকেছে। এখন আলহামদুলিল্লাহ আপু ভালো আছে। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতেছে।
তারপর থেকে আবির ভাইও আপুকে তেমন একটা বিরক্ত করে নি। আপু এখন খুব ধার্মিক হয়েছে সবসময় মুখে আল্লাহর নাম থাকে নিয়মিত নামাজ পড়ে। এককথায় এখন থেকে আপুর নতুন জীবন শুরু হয়.....
(সমাপ্ত)

গল্পঃআপুর বিয়ে(সত্য ঘটনা অবলম্বনে) পর্বঃ০৬

গল্পঃআপুর বিয়ে(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
পর্বঃ০৬
বাইরে বের হয়ে দেখি আবির ভাই(আপুর স্বামী) উঠোনে দাড়িয়ে অবন্তী অবন্তী বলে ডাকছে। তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো সে এইমাত্র নেশা করে আসছে। আমি আর মা বাইরে বের হলে সে দৌড়ে এসে মায়ের উপর পড়ে। মায়ের পা ধরে সে বলতে থাকে আম্মা আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমার ভুল হয়ে গেছে।অবন্তী কোথায়? আমি অবন্তীকে নিয়ে যেতে চাই। মা বারবার চেষ্টা করেও তাকে পা থেকে ছাড়াতে পারছিলো না। তখন আমি টেনে তাকে দাঁড় করাই এবং তাকে চলে যেতে বলি। তখন সে আমার পায়েও ধরতে গেলে আমি সড়ে দাঁড়াই। আমি তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রাস্তায় উঠিয়ে দিয়ে আসি। একটুপর দেখি সে আবার এসে হাজির। এইবার সে ডাইরেক্ট আমার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লে আমি বাবা আর ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বাড়ি আসতে বলি। বাবা আসলে সে বাবাকে দেখে বাবার পা ধরে মাটিতে শুয়ে চিৎকার করতে থাকে এবং ক্ষমা চাইতে থাকে।
তখন ভাইয়া আসলে আমি আর ভাইয়া তাকে ধরে দাঁড় করাই। তখন ভাইয়া আর বাবা তাকে স্পষ্ট বলে দেয় আর কখনো যেনো সে আমাদের বাড়িতে না আসে এবং আপু তার সংসার করবে না এবং ডিভোর্স লেটার এই কয়দিনের ভেতরেই তার বাড়ি পৌঁছে দেয়া হবে। তখন সে আবার চিৎকার শুরু করে আর অবন্তী অবন্তী বলে ডাকতে শুরু করে। আর বলে আমার অবন্তী আমার এই কষ্ট দেখলে সহ্য করতে পারবে না। একবার শুধু আমার সাথে অবন্তীকে দেখা করতে দিন। আপু তখনো পাশের বাসার চাচীর রুমেই আছে। আপু তখনো জানতো না আবির ভাই আসছে। আর আমার এক পিচ্ছি কাজিনকে দিয়ে চাচীর কাছে খবর পাঠিয়েছিলাম নানান কথা বলে আপুকে যেনো চাচী আটকে রাখে এখন বাড়িতে আসতে না দেয়।কারন আপু এসে তাকে দেখলে আর তার এই কান্নাকাটি দেখলে আপুর মন গলে যেতে পারে।
ভাইয়া তখন আপুর স্বামীকে মারতে গেলে বাবা বাধা দেয়। তখন ভাইয়া তার ঘাড় ধরে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারপর আর কয়দিন সে আসার সাহস পায় নি।
তার এক সপ্তাহ পরে এক বিকেলে সে আর তার মা হাতে একটা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে আমাদের বাড়ি এসে হাজির। ঐদিন আপুও তাদেরকে দেখতে পায়।কারন আপু তখন রুমেও বসা ছিলো। আপু তাদেরকে দেখে না দেখার ভান করে অন্যদিকে চলে যায়। আপুর শ্বাশুড়ি এসে মিষ্টির প্যাকেটটা মায়ের হাতে দিলে মা তা রাখেনি তাদেরকে ফেরত দিয়ে দেয়। তখন আপুর শ্বাশুড়িও আমার মায়ের হাতে পায়ে ধরার অবস্থা। মা এককথা বলে দেয় আমার মেয়ে আপনার ছেলের সংসার করবে না। তাই দয়া করে আপনারা চলে যান এবং আর কখনো আসবেন না। কিন্তু আপুর স্বামী তখনো পাগলামো করার চেষ্টা করলে ভাইয়া আর বাবা বাড়ি না থাকায় আমরা কাজিনরা মিলে তাদেরকে বাড়ির বাইরে দিয়ে আসি। তারা ঐদিনের মতো চলে যায়।
তার দুইদিন পর আপুর স্বামী আবার আমাদের বাড়ি আসে। ঐদিন তাকে দেখে ভাইয়ার মাথা গরম হয়ে যায় এবং তাকে মারতে যায়। কয়েকটা থাপ্পড় লাগিয়েও দেয়। তখন আপু এটা দেখে দৌড়ে এসে ভাইয়াকে সরিয়ে দিয়ে আপু বলে উঠে"আমি নিষেধ করছি তাকে তোমরা কিছু করবে না। তাও তার গায়ে কেনো হাত তুললা? আমি এখন তার সাথে চলে যাবো।আমি তার সংসারই করবো"
আপুর কথা শুনে তো ভাইয়ার মেজাজ আরো গরম হয়ে যায়। ভাইয়া তখন আপুকেও একটা থাপ্পড় মারলে মা এসে আপুকে নিয়ে যায়।তখন আপুর স্বামীকে ঐ দিনের মতো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। যা দেখে আপুও ক্ষেপে যায় এবংআপু সিদ্ধান্ত নেয় আপু আবার তার কাছেই চলে যাবে।
ভাইয়া আপুকে এটাও বলে তুই যদি আবার ঐ বাড়িতে যাস তাহলে তোর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই। তুই আমার বোন না!
বাবাও আপুকে অনেক শাসায়। কিন্তু আপু তখন কারো কথা শুনতেছে না। তার এককথা সে চলেই যাবে। আর হ্যা আপুকে অনেকবার বলা হয়েছিলো ডিভোর্স দেয়ার জন্য কিন্তু আপু ইচ্ছে করেই দেরি করতেছিলো। আজ না কাল বলে এতোদিন দেরি করিয়ে এখন বলছে সে আবার এই স্বামীর সংসার করবে।
আপু কারো কথা শুনছে না দেখে বাবা আর মা ভাইয়াকে বলে কি আর করবো সে যখন যেতে চাচ্ছে আর তার স্বামীও তাকে নিতে চাচ্ছে। তাহলে তার শ্বশুর শ্বাশুড়িকে ডেকে কথা বলে তাকে আবার পাঠিয়ে দেই। ভাইয়া তখন রেগে গিয়ে সবার সামনেই আপুর উদ্দেশ্য বলে "শুনে রাখ আজ থেকে আমার আর কোন বোন নেই। তুই অবন্তী আজ থেকে আর আমার বোন না" বলেই ভাইয়া বেরিয়ে যায়।
তখন আপু অনেক কান্না করে কিন্তু তাও আপু বলে যে সে আবার শ্বশুর বাড়ি ই চলে যাবে। এই স্বামীর সংসারই করবে। তখন বাবা আপুর শ্বশুরকে ফোন করে আসতে বললে আপুর শ্বশুর শ্বাশুড়ি আপুর স্বামী সবাই আসলে গ্রামের আরো কয়েকজন মুরব্বিকে ডাকা হয়। সবাই মিলে একসাথে বসে আপুর স্বামীকে কিছু নিয়মকানুন দেয়া হয় এবং বলা এই নিয়মগুলো মেনে যদি সে চলতে পারে তাহলে সে আপুকে নিতে পারবে। আর নিয়ম ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে অকপটেই বলে ফেলে সব নিয়ম মানতে সে রাজি। আর নিয়মগুলো ছিলো এমনঃ
★আপুকে ফোন ব্যবহার করতে দিতে হবে। আপুর নিজস্ব মোবাইল থাকবে।
★আপুর যখন ইচ্ছে আপু তখনই আমাদেরকে ফোন করতে পারবে। কোন বাধা দেয়া যাবে না.....
★নিয়মিত তাকে শ্বশুরবাড়ি আসতে হবে যখন আপুর মন চাইবে তখনই...
এমন কতকগুলো নিয়ম দেয়া হয় আপুর স্বামী নিয়ম মেনেই আপুকে আবার নিয়ে যায়।
আপুকে আবার নিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রথম কয়েকদিন আপুকে তারা খুব ভালো রাখে। নিয়মিত আমাদের সাথে যোগযোগ করতো এবং আপুকে ফোন কিনে দেয়। সপ্তাহে তিনদিনে একবার আপুকে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসতো। আপুকেও তখন খুব হাসিখুশি দেখা যায়। সবমিলিয়ে মনে হচ্ছিলো আপুর আবার যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিলো না।
তার কয়েকদিন পর দুইদিন পার হয়ে গেলেও আর আপুর কোন ফোন পাচ্ছি না। আপুকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু আপুর ফোন সুইচ অফ তার স্বামীর ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করছে না। আপুর শ্বশুর শ্বাশুড়িকে ফোন দিলে তারা ফোন রিসিভ করে বলে তারা এখন বাড়িতে নেই। তারা এখন রাঙামাটি আর আপুরা নাকি ভালো আছে। আপুর ফোন সুইচ অফের কথা জিগ্যেস করলে তারা তা এড়িয়ে যায়।
তার পরদিন আমি আর আমার এক কাজিন মিলে আপুর শ্বশুরবাড়ি যাই......
চলবে.......

গল্পঃআপুর বিয়ে(সত্য ঘটনা অবলম্বনে) পর্বঃ০৫

গল্পঃআপুর বিয়ে(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
পর্বঃ০৫
তারপর তিনদিনের দিন রাতে হঠাৎ মায়ের ফোনে আপুর স্বামীর ফোন আসে। মা ফোনটা রিসিভ করলে আপুর স্বামী মা কে সালাম দিয়ে নরম গলায় বলে যে সন্ধ্যার পর থেকে আপুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন মা গরম হয়ে গিয়ে তাকে বলে আমি এতো কিছু জানি না আমার মেয়ের যদি কিছু হয় তাহলে তোমার খবর আছে। বাবাও তখন আপুর স্বামীকে ধমকায় এবং আপুর সন্ধান চায়। একটুপর আপুর শ্বশুর বাবার ফোনে ফোন দিয়ে বলে ভাই তোমার মেয়েকে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। সন্ধায় আবির বাচ্চাদের পড়াচ্ছিলো পড়ানো শেষ করে রুমে গিয়ে দেখে অবন্তী রুমে নেই। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাবা খুব সহজে রাগেন না তখন বাবা প্রচন্ড রেগে গিয়ে আপুর শ্বশুরকে বলেন "তোমার ছেলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার মেয়ে বাড়ি ছাড়ছে। আমি এতোদিন শুধু মেয়ের নিষেধের কারনে কিছু বলিনি। এখন যদি আমার মেয়ের কিছু হয় তাহলে তোমাদের খবর আছে".....
আমি ভাইয়াকে ফোন দিয়ে এই সংবাদ জানানোর পর ভাইয়াও আপুর স্বামীকে থ্রেট করে। বিয়ের আগে থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই প্রথম আপুর স্বামীর সাথে ভাইয়ার কথা হয়।
এইদিকে আমরা সবাই টেনশন করতেছি কারন আপুর স্বামী ফোন দেয়ার পর থেকে একঘন্টার বেশি হয়ে গেছে। এখনো আপুর কোন খোঁজ পেলাম না। যতো আত্মীয়স্বজন আছে সবাইকে ফোন দিলাম। কিন্তু আপু কারো বাসায় যায় নি। এমনি মায়ের ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। তা রিসিভ করে জানতে পারি আপু এখন রুপা আপুর বাসায় যাচ্ছে। আর কোন একটা দোকান থেকে মাকে কল করেছে এবং আপাতত আপু কয়েকটাদিন রুপা আপুর বাসায় থাকবে। আর হ্যা রুপা আপুর বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো এবং তার একটা ছোট ছেলেও আছে। আপুর ফোন পেয়ে আমরা কিছুটা চিন্তামুক্ত হলাম। ঐ দিকে আপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে বারবার ফোন আসতেছে আমরা আপুর কোন খোঁজ পেয়েছি কি না তা জানার জন্য। কিন্তু আমরা যে আপুর খোঁজ পেয়েছি তা তাদেরকে না জানিয়ে উল্টো তাদেরকে প্রেশারে রাখি এবং বলি যে করেই হোক আপুকে ওরা খুঁজে বের করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে।
রাত প্রায় এগারোটার সময় রুপা আপু ফোন দিয়ে বলে টেনশন করা লাগবে না আপু ঠিকমতোই বাসায় পৌঁছেছে। এভাবে কাটে চারদিন আর এই চারদিনে কমপক্ষে কয়েকশত বার আপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে আপুর খোঁজ জানার জন্য ফোন আসে। কিন্তু আমরা প্রত্যেকবারই বলে দিছি না আমরা আপুর কোন খোঁজ জানি না। আর আমরা খুঁজতেছি কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না আপনারা যেভাবেই হোক আপুকে খোঁজে বের করে আমাদের কাছে নিয়ে আসবেন।
চারদিন পর বাবা রুপা আপুর বাসায় গিয়ে আপুকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। আপুকে দেখে মা হাউমাউ করে কান্না করে দেয়। কারন আপুর এতো সুন্দর মায়াবী চেহারার এখন কি অবস্থা হয়েছে।
আপুর মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে এবং শরীর অনেক শুকিয়ে অবস্থা খারাপ। মনে হচ্ছে যেনো আপু এইমাত্র কোন কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছে। আর আপুর শ্বশুরবাড়ি আপুর জন্য কারাগারের থেকে আরো বেশি যন্থনাদায়ক ছিলো।
আপু বাড়ি আসলে আপুর মুখে শুনতে পারি আপুর উপর নির্মম নির্যাতনের বর্ণনাঃ- আপুকে একদম অবরুদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছিলো। কারো সাথে কোন যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি এবং আপুকে বলা হয়েছিলো যে আপু বাবার বাড়ির কারো সাথে কোন যোগাযোগ রাখতে পারবেনা। আপু এর কারণ জিগ্যেস করলে আপুর স্বামী নাকি বলেছিলো এটা আমার নিষেধ তাই পারবিনা। আর হ্যা আপুকে তুই তুকারী করতো। আর আপুর ফোনটা সে ভেঙে ফেলেছিলো আর সিমটা পানিতে ফেলে দিয়েছিলো। আপুকে সে মারধর ও করেছিলো একদিন রাতে নাকি আপুকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরেও ফেলতে চেয়েছিলো!!তখন আপুর শ্বশুর এসে আপুকে বাঁচায়।
আপু কথাগুলো বলার সময় খেয়াল করছিলাম আপুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তেছিলো।
আপু আবির ভাইকে(আপুর স্বামী) অনেক বেশি ভালোবাসতো। আমরা আপুর স্বামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলে আপু তাও করতে দেয় নি। আর এই কয়দিনের প্রতিদিনই আপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন আসতো। আপু বাড়ি আসার পরেরদিন আপু মাকে ডেকে বলে আপু যে বাড়ি আসছে এটা তার স্বামীকে বলে দেওয়ার জন্য।
বাবা মা ভাইয়া সবাই বলছে যে না তাকে আমরা প্রেশারে রাখবো কিন্তু আপুর অনুরোধে বলে দেয়া হয় আপু আমাদের বাড়িতেই আছে। আপুর স্বামীকে তার সাথে সাথে এটাও বলে দেয়া হয় যে কখনো যেনো সে এবং তার পরিবারের কেউ আমাদের কাউকে ফোন না দেয় এবং আপু আর তার সংসার করছে না এটাও তাকে বলে দেয়া হয়। আর তাকে এটাও বলে দেয়া তার কাছে খুব শীঘ্রই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়া হবে।
তারপর থেকে শুরু হয় আপুর স্বামীর কান্নাকাটি সে বারবার ফোন দিতে থাকে মা একবার ফোন ধরলে সে ফোনেই মার হাতে পায়ে ধরা শুরু করে এবং বারবার মায়ের ফোনে মেসেজ করতে থাকে। আর মেসেজগুলো সে আপুর উদ্দেশ্যে লিখে। যদিও এই মেসেজগুলোর একটা মেসেজও আপুকে পড়তে দেয়া হয় নি। ভাইয়া তাকে ফোন দিয়ে আমাদেরকে আর ফোন না দেয়ার জন্য অনুরোধ ও করে।কিন্তু কে শোনে কার কথা সে বারবার ফোন এবং মেসেজ করতেই থাকে। অবশেষে বিরক্ত হয়ে তাকে ব্লক করে দেয়া হয়। তাকে ব্লক করে দেয়ার পর সে আপুর শ্বাশুড়ির নাম্বার দিয়ে বিরক্ত করা শুরু করে। তখন বাধ্য হয়ে আপু শ্বাশুড়িকেও ব্লক করা হয়। আর হ্যা এর মাঝে আপুর শ্বশুর কয়েকবার ফোন করে বাবার কাছে ক্ষমা চায় এবং আপুকে ফেরত নিতে চাইলে বাবা তাকে না বলে দেয়া হয়।
প্রথম কয়েকদিন আপুর হাতে কোন ফোন দেয়া হয় নি এক সপ্তাহ পরে ভাইয়া একটা নতুন সিম আর একটা ফোন কিনে আপুকে দেয়। আপুর হাতে ফোন দিয়ে আপুকে শর্ত দেয়া হয় আপু আত্মীয় স্বজন ছাড়া আর কাউকে ফোন দিতে পারবে না। আপুর হাতে ফোন দেয়ার দুইদিন পরে আপুর স্বামী অন্য একটা নাম্বার দিয়ে মায়ের ফোনে অনেক অনেক মেসেজ করে এবং সে মেসেজে এটাও লিখে"অবন্তী আমি তোমাকে না পেলে বাঁচবো না,আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে। মরার আগে একটিবার তোমার মুখ দেখতে চাই " আর এই মেসেজ টা কি করে যেনো আপু দেখে ফেলে। এই মেসেজ দেখার পর আপুর মন হালকা নরম হয়ে গেলে আপু সবার অগোচরে আবির ভাইকে মেসেজ করা শুরু করে। আর আপু যে আবির ভাইকে মেসেজ করতো আমরা কেউ সেটা জানতাম না। যদিও পড়ে জানতে পারছি। তার দুইদিন পর এক দুপুরবেলা আমি আর মা রুমে বসে আছি আর আপু তখন পাশের বাসার চাচীর রুমে ছিলো ঠিক তখন হঠাৎ শুনতে পেলাম কে যেনো বাইরে উঠানে দাড়িয়ে খুব করুণ সুরে অবন্তী অবন্তী বলে ডাকছে। ডাক শুনে আমি আর মা দৌড়ে বাইরে বের হই.....
চলবে....

গল্পঃআপুর বিয়ে(সত্য ঘটনা অবলম্বনে) পর্বঃ০৪

গল্পঃআপুর বিয়ে(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
পর্বঃ০৪
আমি আপুর বাড়ি থেকে আসার দুইদিন পর হঠাৎ আপু ফোন করে মাকে বলে "মা তোমরা আর কখনো আমাকে ফোন দিবে না"। আপুর কথা শুনে তো মা হতবাক এ কেমন কথা তোকে ফোন দিবো না কেনো?
-তোমরা ফোন না দিলে আমি ভালো থাকবো। তাই যদি তোমরা আমার ভালো চাও তাহলে আমাকে ফোন দিবে না।(আপু)
-এ কি বলছিস মা তুই। নিশ্চয়ই তোর কোন সমস্যা হইছে। কি হইছে বল। জামাই কি আমাদের সাথে কথা বলতে তোকে নিষেধ করছে? কোন সমস্যা হলে বল তোর বাবাকে পাঠাই(মা)
-না মা আমার কিছু হইনি আর আবির নিষেধ করবে কেনো। আমি ভালো আছি আর কখনো আমাকে ফোন দিবে না। আর শোনো আমার শ্বশুরকেও ফোন দিবে না এবং এই বিষয়ে কিছু বলবে না।আমিই তোমাকে ফোন দিয়ে খোঁজ-খবর জানাবো বলেই আপু ফোন কেটে দেয়।
আর হ্যা আমার একটা চাচাতো বোন ছিলো তার সাথে আমার আপুর খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। তার নাম ছিলো রুপা তারা দুইজনই একে অপরকে সবকিছু বলতো। আর আপুর বিয়ের পরও সবসময় রুপা আপুর সাথে আমার আপুর কথা হতো। তখন মা রুপা আপুকে ফোন দিলে জানতে পারি দুলাভাই আপুকে আমাদের কারো সাথে কথা বলতে দিবে না। এই জন্যই আপু মাকে ফোন দিয়ে আপুকে ফোন দিতে নিষেধ করে। আপুর নিষেধের কারণে আপুর শ্বশুরকেও আর এ বিষয়ে কিছু বলা হয় নি। এভাবে কেটে যায় এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহ আপুর চিন্তায় আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক সপ্তাহ পর একরাতে আপুর ফোন আসলে জানতে পারলাম আপু ভালো আছে। আর আমাদেরকে তার জন্য টেনশন করতে নিষেধ করে।
এইভাবে কাটে আরো পাঁচ দিন। এই পাঁচদিনে আপু একবারও ফোন দেয় নি। পাঁচদিন পর বাবা দুলাভাই এর ফোনে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করে বাবাকে গালিগালাজ করে। এমনকি বাবা কে সে তুই বলেও সম্বোধন করে এবং এটাও বলে যে তুই ফোন দিয়েছিস কেনো? তোর মেয়ে না তোকে ফোন দিতে নিষেধ করেছে। তারপরও তুই ফোন দিলি কেনো?
বলে সে ফোনটা কেটে দিলে ঐদিন ভাইয়াকে সবকিছু বলা হয়। তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আপুর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
পরদিন সকালে বাবা আপুকে না জানিয়ে আপুর শ্বশুরবাড়ি যায়। বাবা বিয়ের আগে একবার আপুর শ্বশুরবাড়ি এসেছিলো বলে বাবার আসতে কোন সমস্যা হয় নি। বাবা এসে দেখে তাদের বাড়ির বাইরের গেইট টা বন্ধ এবং গেইটের ভেতর থেকে তালা লাগানো আর বাইরে থেকেও তালা লাগানো।এটা দেখে বাবার খুব অদ্ভুত লাগে কারণ ভেতর থেকেও লক আবার বাইরেও লক। বাবা তখন বুঝে উঠতে পারছিলো না যে এমনটা কি করে হয়!
বাবা কিছুক্ষন থমকে দাড়িয়ে রইলেন কিন্তু কিছুতেই বাবা বুঝে উঠতে পারছিলেন না এমনটা কোনো হবে। তখন বাবা গেইটের এক ফাক দিয়ে ভেতরটা পরখ করতে লাগলেন। তখন হঠাৎ বাবার কানে কিছু একটার আওয়াজ আসছিলো। বাবা খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে বুঝতে পারলেন এটা টিভির আওয়াজ। ভেতরে টিভি চলছে তার মানে নিশ্চয়ই ভেতরে কোন মানুষ আছে। কিন্তু আবার পরক্ষনেই মনে হচ্ছে ভেতরে কেউ থাকলে গেইট বাইরে থেকে লক কেনো? তখন বাবার মাথায় বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো। তখন বাবা তাদের বাড়ির চারপাশটাতে একটা চক্কর দিয়ে দেখতে পেলেন বাড়ির পশ্চিম দিকটাতে আর একটা গেইট আছে এবং ঐ পাশটাতে ইটের দেয়াল ছিলো আর তিনপাশে ছিলো টিনের বেড়া। আর ঐ গেইটে একটা নয় দুইটা তালা লাগানো আছে। তখন বাবা আরো থমকে গেলেন যে ঐ গেইটেও তালা ঝুলছে আবার এই গেইটে একটা নয় দুইটা তালা আবার ভেতর থেকে টিভির আওয়াজ! বাবার মনে কৌতুহল জাগছিলো তখন বাবা কয়েকবার গেইটটাতে জোরে ধাক্কা দিলেন। কিন্তু কেউ কোন সাড়া দিচ্ছিলো না দেখে বাবা কৌতূহল এর বশে অনেক কষ্টে দেয়াল টপকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন। বাবা ভেতরে প্রবেশ করে ভারী অবাক হলেন কারণ তিনি স্পষ্ট টিভির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন অথচ বাড়ির মেইন গেইটে আরো চারটি তালা ঝুলছে!!
বাবা বারান্দার সামনে গিয়ে দেখলেন রুমের দরজা খোলা আছে এবং ভেতরে লাইট জ্বলছে। আর পর্দা টেনে দেয়া আছে বলে ভেতরে কে আছে তা বাবা এখনো বুঝতে পারছেন না। তখন বাবা গেইটে ধাক্কা দিলে বাবাকে অবাক করে দিয়ে ভেতর থেকে আপু বের হয়ে আসে।
বাবা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না যে এই যুগে এটা কেমন করে সম্ভব! বাড়ির ভেতরে একজন নতুন বউ আছে আর ঐ বাড়ির বাইরের দুই গেইটে চারটা তালা আর ভেতরের গেইটে আরো চারটা তালা মোট আটটা তালা!! বাবা কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছেন না যে তার মেয়ে একলা একটা বাড়িতে এবং তাকে এই আধুনিক যুগে তালাবদ্ধ করে রাখা রয়েছে। তাও কিনা আটটা তালা!!
এটা ভেবেই বাবার চোখে পানি এসে যায়। আপু বাবাকে দেখে কান্না করে দেয়। বিয়ের পর এই প্রথম বাবা আপুর শ্বশুরবাড়ি আসে কিন্ত আপুর এতোই পোড়া কপাল যে আপু বাবাকে ভেতরে এসে বসতে বলবে সেই সুযোগটাও আপুর হাতে ছিলো না। কারণ আপুর কাছে তো চাবি ছিলো না। আপুর স্বামী আর শ্বাশুড়ি আপুকে বাড়িতে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে তারা চাবি নিয়ে আপুর স্বামীর আজ একটা পরীক্ষা ছিলো ঐ পরীক্ষায় চলে যায়।
বাবা তখন আপুকে বলে আমি তোর স্বামীর বিরুদ্ধে আমি মামলা করবো। তখন আপু বাবাকে হাত জোর করে বলে না বাবা এসব কিছু করার দরকার নেই। আমি সময় বুঝে এখান থেকে চলে আসবো। আমি এখানে থাকতে পারবো না বাবা। ও আমাকে অনেক অত্যাচার করে । আর বাবা তোমরা কোন টেনশন করবে না আমি এই কয়দিনের মধ্যেই এই বাড়ি ছেড়ে তোমাদের কাছে চলে আসবো। আমি এখান থেকে বের হয়েই আম্মার ফোনে ফোন দিয়ে তোমাদেরকে জানাবো। বাবা তুমি এখানে আর দেরি না করে চলে যাও। ওরা এসে তোমাকে দেখলে সমস্যা হবে। তুমি চলে যাও বাবা। আপুর এই অবস্থা দেখে বাবা কিছুতেই চোখের জল আটকে রাখতে পারছিলো না। তখন বাবা চোখে জল নিয়েই বাড়ি ফিরে আসে। তারপর থেকে আমরা আপুর ফোনের অপেক্ষায় থাকি। এইভাবে দুইদিন কেটে যায়। এরপর তিনদিনের দিন রাতে....
চলবে....

গল্পঃআপুর বিয়ে (সত্য ঘটনা অবলম্বনে) পর্বঃ০৩

গল্পঃআপুর বিয়ে (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
পর্বঃ০৩
ভাইয়া চলে গেলে একটুপর এশার নামাজের আযান দিলে আব্বু নামাজে চলে যায়। তখন আমি আর মা বসে আছি মায়ের চোখ দুটো ছলছল করে উঠতে দেখলাম। পরক্ষনেই দেখতে পেলাম মায়ের চোখের কোণে পানি। অবন্তী আপু সবার অনেক আদরের ছিলো। আমাদের একমাত্র বোন ছিলো অবন্তী আপু। ভাইয়া বাবা মা সবাই আপুকে খুব আদর করতো। এতো বড়ো হওয়ার পরও আপু কলেজ থেকে ফিরলে প্রতিদিন দুপুরের খাবারটা মা নিজ হাতে আপুকে খাইয়ে দিতো। বাবা খেতে বসলেই আপুর দিকে এক লোকমা ভাত এগিয়ে দিয়ে বলতেন নে মা শ্বশুরবাড়ি চলে গেলে তো আর খাইয়ে দিতে পারবো না। আর তখন আপু খুব রাগ করতো আর বলতো আব্বু আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।
এই স্মৃতিগুলো ভাবতেই আমার চোখেও জল এসে গেছে। ঐ দিকে মা বিড়বিড় করে বলছে আমি বলেছিলাম ওদের আংটি ফেরত দিয়ে দে। এই ছেলেকে আমার আগেই সুবিধার মনে হয় নি। কিন্তু আমার মেয়ে আমার কথা শুনে নি। এখন বুঝুক মজা বলেই মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঐ রাতে আর আমাদের কারোরই রাতের খাবার খাওয়া হয় নি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মা আপুর খোঁজ নেয়ার জন্য আবির ভাই এর (আপুর স্বামী) ফোনে ফোন দেয়। কয়েকবার ফোন দিলে তার ফোনে রিং হওয়ার পরও সে ফোন রিসিভ করছে না। এইদিকে আপুর চিন্তায় মায়ের করুণ দশা অন্যদিন মা সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নাস্তা রেডি করতে বসে। কিন্তু আজ যেনো মা তা ভুলেই গেছে। একটুপর আপুর স্বামীর ফোন থেকে মায়ের ফোনে ফোন আসলে ফোনের ওপাশ থেকে আপুর গলা শোনা যায়। আপু মাকে আশ্বস্ত করে যে আপু ভালো আছে। আপুর ফোন পেয়ে মা কিছুটা শান্তি অনুভব করে।
তার দুইদিন পর আপু ফোন দিয়ে আমাকে আপুর শ্বশুরবাড়ি আসতে বলে। আর আপু মাকে দুলাভাই এর পছন্দের খাবারের কথা বললে মা তা রান্না করে দেয় এবং তা নিয়ে আমি আপুর শ্বশুরবাড়ি যাই। যদিও আপুর শ্বশুরবাড়ি আসতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ আমি তাদের বাসায় আগে কখনো আসিনি বলে চিনতাম না। আমাকে আপু ফোনে ঠিকানা দিলে ঐ ঠিকানা অনুযায়ী রাস্তায় কয়েকজনকে জিগ্যেস করে আপুর শ্বশুরবাড়ি আসি। আপুর শ্বশুরবাড়ি ঢোকার আগে বাড়িটা কেমন জানি ভুতুড়ে টাইপের মনে হয় আমার কাছে। বাড়ির চারপাশে টিনের বেড়া আর গেইটটাও যথেষ্ট পুরোনো আর গেইট ভেতর থেকে লক করা। আমি কয়েকবার গেইটে নক করলেও ভেতর থেকে কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না। আমার তখন খুব রাগ হচ্ছিলো আর আমি কেমন যেনো অপমান বোধ করছিলাম। কারণ সবসময় দেখতাম প্রথম যখন কোন শালা তার দুলাভাই এর বাড়িতে আসে তখন দুলাভাই তার শালাকে রাস্তা থেকে বাড়িতে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর আমার দুলাভাই এটা ভাবতেই খুব রাগ হচ্ছিলো। তখন মন চাইতেছিলো গেইটে জোরে একটা লাথি মেরে বাড়ি ফিরে যায়। এতো কিছু নিয়ে আসলাম ঐ দুলাভাই কে খাওয়ানোর জন্য আর ঐ ব্যাটা আমাকে এগিয়ে নিতেও আসে নি এমনকি একটাবার ফোন দিয়ে খোঁজও নেয়নি আমি কিভাবে আসতেছি,কতোটুকু আসছি। আমার মা বাবা কেই ফোন দেয় না আর আমাকে!
তখন যে আপুকে ফোন দিয়ে গেইট টা খুলতে বলবো ঐ রাস্তাও তো নেই কারণ ঐ ব্যাটা তো আমার আপুকে ফোন ব্যবহার করতে দেয় না। আর দুলাভাই এর ফোন নাম্বারও আমার কাছে নেই। তখন আর কোন উপায় না পেয়ে মাকে ফোন দিয়ে বললাম দুলাভাই এর ফোনে দিয়ে বলতে গেইট খোলার জন্য আমি বাইরে দাড়িয়ে। মাকে ফোন দেয়ার একটু পর আপু গেইট খুলে আমাকে নিতে আসে। আপু আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বললো ভাই তুই ভালো আছিস তো?
-হ্যা আপু ভালো, তুমি কেমন আছো?
-হ্যা রে ভাই তোদের দোয়ায় ভালোই আছি...
খেয়াল করলাম আপু এই কয়দিনে অনেক শুকিয়ে গেছে আর আপুর সেই সুন্দর মুখখানি কেমন জানি চুপসে গেছে। আপুর চুপসে যাওয়া মুখখানি দেখেই বুঝতে পারছি যে আমার আপু কতো ভালো আছে।
আপু আমাকে আপুর রুমে নিয়ে গেলো রুমে প্রবেশ করে দেখলাম আমার দুলাভাই শুয়ে আছেন।
আমি দুলাভাইকে সালাম দিয়ে কেমন আছে জিগ্যেস করলাম সে ভালো আছি উত্তর দিয়ে আমি কেমন আছি জিগ্যেস করলো। এতোটুকুই আমার তার মাঝে কথোপকথন হয়। সে একবারও জিগ্যেস করলো না আব্বু আম্মু ভাইয়া কেমন আছে। ভাইয়ার কথা না জিগ্যেস করলেও আব্বু আম্মুর কথা তো জিগ্যেস করতে পারতো কিন্তু সে তাও করে নি। একটুপর আপু আমাকে নাস্তা খেতে দেয় আমি বেশি না শুধু একটা বিস্কুট মুখে দিলাম। রুমে প্রবেশ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত আপুর শ্বশুর শাশুড়ি এই দুইজনের কাউকেই আমি দেখতে পাই নি। আর আমার দুলাভাই তখনো শুয়ে আছে তখন সে হাতে রিমোট নিয়ে রিমোট চাপতে লাগলেন। বিস্কুট খাওয়া শেষে একগ্লাস পানি খেয়ে আমি আপুকে বললাম যে আপু আমি চলে যাবো। তখন আপু আপুর শাশুড়িকে ডেকে বলে যে আম্মা শাকিল আসছিলো চলে যাচ্ছে। আপু যখন আপুর শাশুড়িকে ডাকছিলো তখন আমার খুব অবাক লাগছিলো যে ওনি যেহেতু পাশের রুমে সুতরাং আমি যে আসছি তা তিনি অবশ্যই দেখছেন। আর না দেখলেও পাশের রুমে থেকে আমার গলার আওয়াজ শোনার কথা কারণ আমি এতোটাও আস্তে কথা বলিনি যে পাশের রুমে থেকে শোনা যাবে না। আপু ডাক দিলে ওনি আসলেন আমি ওনাকে সালাম দিলে তিনি সালামের উত্তর দিয়ে আব্বু আম্মু কেমন আছে জিগ্যেস করলে আমি উত্তর দিয়ে ওনি কেমন কেমন আছে তা জিগ্যেস করি। তিনি ভালো আছি বলে দুলাভাইকে ডাকে দিয়ে বললেন "আবির তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আয়"।আর শাকিল তুমি আবার এসো কিন্তু.....
আমি ওনার কথা শুনে অবাক হচ্ছিলাম যে কারো বাড়িতে যদি একটা অপরিচিত মানুষও আসে তাহলেও তো তাকে মুখের কথা হলেও বলে যে আজকে থেকে যাও। আর আমার আপুর শ্বাশুড়ি আমাকে তাও বললেন না!
তখন দুলাভাই শোয়া থেকে উঠে আমাকে বললো চলো আবার এসো আর আব্বা আম্মাকে আসতে বইলো। আমার দুলাভাই এর কথা শুনে আমি আবারো অবাক হয়েছিলাম কারণ সে আমার আপন বোনের জামাই হয়েও বলেনি যে শাকিল আজরাতটা থেকে যাও। আমি এমনিতেও থাকতাম না কারণ এই ভুতুড়ে পরিবেশে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না। তখন দেখলাম যে আপু পাশেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইছে। আর আপুর চোখদুটো যে ছলছল করছে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আর এটাও বুঝা যাচ্ছে যে অনেক কষ্ট করে আপু তার চোখের জল আটকিয়ে রেখেছে। তখন আপু আমার কাধে হাত রেখে বললো ভাই এখন আর দেরি করিস না তাহলে তোর বাসায় পৌছাতে রাত হয়ে যাবে। আমি আর কিছু না বলে পা বাড়াই আপু গেইট পর্যন্ত পেছন পেছন আসে এবং পেছন থেকে বলে বাড়ি পৌঁছে ফোন দিবি কিন্তু।
আমি আর পেছনে না তাকিয়ে আচ্ছা বলে যখন গেইটের বাইরে পা রাখবো তখন দুলাভাই আপুকে বলে যে আমি শাকিলকে আগায় দিয়ে আসি। তখন আমি বলি যে না ভাই লাগবে না আমি একাই যেতে পারবো। তখন আমার দুলাভাই আমাকে আবারো অবাক করে দিয়ে বলে আচ্ছা তাহলে তুমি যাও।
আমি তখন বাড়ির পথে রওনা করি আর আমার খুব রাগ হচ্ছিলো আর মনে মনে ভাবছিলাম "এ কেমন পাষাণ মনের মানুষের কাছে আমার আপুকে বিয়ে দিলাম".....
চলবে....

গল্পঃআপুর বিয়ে (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)


গল্পঃআপুর বিয়ে (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)


পর্বঃ০২
আপু চলে যাওয়ার পর বাড়িটা খুব খালি খালি লাগছিলো। আপু যতক্ষণ বাড়িতে থাকতো তার পুরোটা সময় আমি আপুর সাথে দুষ্টুমি করতাম আজ থেকে আর তা করতে পারবো না ভেবেই বারবার মনটা আমার খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। একটুপর আপুর শ্বশুর ফোন দিয়ে বললো যে তারা ঠিকমতোই বাসায় পৌঁছেছে। আর তখন আমার আপুর স্বামী (আবির ভাই) মায়ের কাছে ফোন দিয়ে মিষ্টি সুরে বললো আম্মা আপনাকে ধন্যবাদ আমার জন্য খাবার পাঠিয়ে দেয়ার জন্য আর হ্যা আম্মা রান্নাটা খুব মজার ছিলো। তার কথা শুনে আম্মা তখন হাসতেছিলো ফোনটা কেটে মা আমাকে বললো তোর দুলাভাই টা আসলেই পাগল। আমি তখন বললাম শুধু পাগল না খুব বড়ো মাপের একজন বেয়াদব ও। আব্বু তখন আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন যাই হোক তোর বোনকে সে ভালো রাখলেই চলে। পরদিন সকালে আপু ফোন করলে আমি ফোনটা রিসিভ করেই আপুকে জিগ্যেস করলাম আপু কেমন আছো?
-হ্যা ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
-হ্যা ভালো কবে আসবে তুমি?
-আগামীকাল....
পরদিন দুলাভাই আপুকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। ঐ দিন আমার দুলাভাই সবার সাথেই খুব ভালো ব্যবহার করে। এমনকি ঐদিন সে আমার সাথে আমাদের পুরো গ্রাম ঘুরে দেখে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করেই আমার দুলাভাই এর প্যারা উঠে যে সে এক্ষুনি বাড়ি চলে যাবে। তবে আমাদের গ্রাম্য রীতি অনুযায়ী বিয়ের পর নতুন জামাই শ্বশুরবাড়ি আসলে কমপক্ষে একদিন হলেও থাকে। কিন্তু তার এককথা সে থাকবে না চলে যাবে। মা এতোকরে বললো বাবা আজকের রাতটা থেকে যাও। কিন্তু তার এককথা সে থাকবে না চলে যাবে। আর মা তাকে এটাও বললো যে বাবা তোমার যদি কোন কাজ থাকে তাহলে তুমি যাও তবে অবন্তীকে তো রেখে যেতে পারো। তুমি না হয় কাল এসে নিয়ে যেও। কিন্তু না তিনি তার বউ কেউ রেখে যাবেন না। তিনি তখন এমন একটা ভাব দেখাচ্ছিলেন যে মনে হচ্ছিলো তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বউ পাগল। কি আর করার তখন বাবা বললো আচ্ছা জামাই বাবু যখন থাকবে না তাহলে আজকে চলে যাক দুই একদিন পর আবার আসলেই হয়। আপুও তার জামাই এর উপর আর কথা বললো না আপুও বললো যে আজ আমরা চলেই যাই দুই একদিন পর আবার আসবো। ঐ দিনের মতো আপুরা চলে যায়।
আর ঐ রাতেই হঠাৎ আপুর ফোন অফ হয়ে যায়। আপুর ফোনটাতে বারবার ট্রাই করা সত্ত্বেও আপুর ফোনে ফোন ঢুকছেই না আর এইদিকে আব্বু আম্মু সহ আমরা সবাই খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। তখন বাবা দুলাভাই এর ফোনে ফোন দিলে তার ফোনে রিং হচ্ছে কিন্তু সে কিছুতেই ফোনটা রিসিভ করছে না। তখন বাবা বাধ্য হয়ে আপুর শ্বশুরকে ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখে যে তারা সন্ধ্যার আগেই ঠিকমতো বাসায় পোঁছে গিয়েছিলো। তখন আব্বু আপুর ফোন বন্ধের কারণ জানতে চাইলে ফোনের ওপাশ থোকে আপুর স্বামীর কন্ঠ শোনা যাচ্ছিলো। সে আব্বুকে সালাম কালাম না দিয়েই উত্তর দেয় যে আমার ফোন থাকতে ওর ফোন লাগবে কেনো?
-বাবা তোমার ফোন আছে বুঝলাম কিন্তু তুমি তো সবসময় বাসায় থাকবে না। তখন তার যদি মন চায় যে আমাদের সাথে কথা বলতে তখন সে ফোন পাবে কোথায়?(বাবা)
-আমি না থাকলে বাসায় আম্মা আছে আম্মার ফোন দিয়ে কথা বলবে...(আপুর স্বামী)
-বাবা এটা কি করে হয় এই যুগে কি ফোন ছাড়া কেউ চলতে পারে নাকি। আর সে কয়বার তোমার মায়ের কাছ থেকে ফোন চেয়ে আনবে? তারচেয়ে ভালো না তার কাছে একটা ফোন থাকুক।
-না বাবা তার কাছে কোনো ফোন থাকতে পারবে না..
Related image



এটা নিয়ে রীতিমত আব্বু আর আপুর স্বামীর মধ্যে ঝগড়া বেধে যাচ্ছিলো। তখন শুনতে পেলাম ফোনের ওপাশ থেকে আপু বলছে বাবা আমার ফোন লাগবে না। আবির যা বলছে তা আমার ভালোর জন্যই বলছে। আর আমার সিমটা আমি পানিতে ফেলে দিছি আমার ফোন লাগবে না বাবা। আমি আবিরের ফোন থেকেই তোমাদেরকে ফোন দিবো। আপুই যখন এটা বলেছে তখন বাবা আর কথা না বাড়িয়ে ভালো থাকিস বলে ফোনটা কেটে দেয়.......
আব্বু ফোনে কথা বলার সময় আমি আর মা পাশেই ছিলাম আর তখন ভাইয়া ছিলো পাশের রুমে। আর ঐ রুম থেকে সবকিছুই স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো। ভাইয়া চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছিলো। আর হ্যা বলে রাখি ভাইয়ার এই বিয়েতে এতোটা মত ছিলো না। ভাইয়া তখন পাশের রুম থেকে এই রুমে এসে চোখ মুখ গরম করে বলছে আমি আগেই নিষেধ করছিলাম এই ছেলের সাথে আমার বোনকে বিয়ে দিবো না। কিন্তু কে শুনে কার কথা আমার বোনটারও তাকেই চাই আর তোমরাও ঐ ছেলের কাছেই মেয়ে বিয়ে দিবে। এখন সবাই মজা বুঝো বলেই রাগ করে ভাইয়া বাইরে চলে গেলো......
চলেবে........

গল্পঃআপুর বিয়ে (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)


Related image

গল্পঃআপুর বিয়ে (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
পর্বঃ০১
আমি যখন ক্লাস টেইনে পড়ি তখন আমার আপু অবন্তী একটা সরকারি কলেজে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়তো। আপু আমাকে অনেক আদর করতো আর স্বপ্ন দেখাতো তুই অনেক বড়ো হবি। যদিও আমার তখন এইসব ভালো লাগতো না গায়ে মাখতাম না খুব বিরক্ত লাগতো। এখন আসি আসল কথায় তখন আপুকে একটা ছেলে ফেসবুকে নক করে এবং ছেলেটা পরিচয় দেয় যে আপুর অমুক স্যারের খুব ঘনিষ্ট কেউ। আপু দুইদিন পর তার মেসেজ এর রিপ্লে করে। আপু খোঁজ নিয়ে দেখলো ছেলেটা আপুর কলেজের পাশের স্কুলের হেড মাষ্টারের ছেলে। ছেলেটা ইংরেজিতে মাস্টার্স শেষ করে তখন এল.এল.বি পড়তেছিলো। যতটুকু আন্দাজ করা গেছে তাতে বুঝা গেছে ছেলেটা যথেষ্ঠ টেলেন্টেড। ছেলেটির নাম ছিলো আবির। তাদের মধ্যে মেসেজিং চলতে থাকলে আস্তে আস্তে প্রেম ও হয়ে যায় এবং আপু বাসায় এটা শেয়ার করলে বড় ভাইয়া ছাড়া বাকি সবাই আপুর পছন্দকে প্রাধান্য দেয়। আর আপুও ছেলেটাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলে। আপু টিউশন থেকে যতো টাকা পেতো তার তিনভাগের দুইভাগই তার সাথে ফোনে কথা বলায় ব্যয় করতো। যেহেতু আমাদের বাসার সবাই এটা জানতো তাই আপুকে এই বিষয়ে কেউ কিছু বলতো না। তারপর খোজ নিয়ে দেখা গেলো আবির ভাইয়ার বাবা আমার বাবার বন্ধু এবং তারা স্কুল লাইফে একসাথে পড়াশোনা করেছেন। আপু একদিন আবির ভাইয়াকে বাসায় নিয়ে আসছিলো। ঐ দিন বুঝলাম যে আবির ভাইয়া যথেষ্ট লাজুক এবং বিয়ের পর আমার আপুর আঁচল ছাড়বে না। আমাকে পাশে ডেকে আমি কোন ক্লাসে পড়ি এসব হাবিজাবি জিগ্যেস করেছিলো। ওনার কথা শুনে ওনাকে খুব স্মার্ট মনে হয়েছিলো। ঐ দিন তিনি বেশিক্ষণ দেরি না করে চলে গিয়েছিলো। তার কয়েকদিন পর এক রাতে যখন আমি পড়তেছিলাম তখন দেখলাম যে আপু বাইরে থেকে এসে চুপচাপ বসে আছে আর আপুর চোখের কোণে পানি। কিন্তু বুঝে উঠতে পারিনি যে কেনো আপুর চোখে পানি।
তার অল্প কয়েকদিন পরেই দুই ফ্যামিলির সিদ্ধান্তে আপুর আংটি বদল হয়ে যায় এবং আবির ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়ের দিন তারিখ ও ঠিক হয়ে যায়।
আংটি বদলের একদিন পরেই দেখি ঐ রাতের মতো আজ রাতেও আপুর চোখে পানি। এতোটুকু বুঝতে পারলাম যে নিশ্চয়ই আবির ভাইয়ার সাথে আপুর কোনো ঝামেলা হয়েছে। ঐ দিকে মা বলছে যে এই বিয়ের দরকার নেই তাদের আংটি তাদেরকে ফেরত দিয়ে দিলেই হবে। কিন্তু আপু বারবার মাকে বুঝাচ্ছিলো যে মা বিয়ের পর সবঠিক হয়ে যাবে আর আপু আবির ভাইয়াকে অনেক বেশি ভালোবাসতো। 

তাই আপু চাচ্ছিলো বাকি জীবনটা যেনো ভালোবাসার মানুষের সাথেই কাটাতে পারে। আপু মাকে অনেক বুঝিয়ে আর বিয়ে ভাঙতে দেয় নি। আস্তে আস্তে বিয়ের দিন চলে আসে আর বিয়ের দিন বুঝতে পারছিলাম যে হয়তো আবির ভাইয়ার মাথায় কোন প্রবলেম আছে। কারণ দুনিয়ায় আমি এই প্রথম দেখলাম যে বিয়েতে পাত্র আসে মোটরসাইকেলে চড়ে এবং পাঞ্জাবি পায়জামা মাথায় পাগড়ি না পড়ে গরমের দিন একটা শীতের জামা গায়ে দিয়ে! সেটা বড়ো কথা নয় বড়ো কথা হলো সবাই বিয়েতে হাজির এমনকি সবার খাওয়া দাওয়া শেষ কিন্তু পাত্রসাহেব এখনো আসেন নি। তিনি আমাদের বাড়ি থেকে ক্ষাণিকটা দূরে মোটরসাইকেলে বসে ফোন করে বলছেন যে তিনি আসতে পারবেন না। আর তিনি ফোনে কবুল বলবেন যাই হোক আপুর অনেক বুঝানোর পর তিনি মোটরসাইকেলে চড়ে হাজির হলেন এবং তিনি ঐ সময় একটা চরম বেয়াদবের পরিচয় দিলেন। তিনি একজন বর আর তার সামনে দাড়িয়ে থাকা তার চাচা শ্বশুর এমনকি একটুপর যেই মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন সেই মেয়ের বাবা মানে আমার বাবা তার শ্বশুরকেউ পর্যন্ত সে সালাম দেই নি। তার এই ব্যবহারে আমার বড় ভাইয়া চাচারা খুব রেগে গিয়েছিলেন কিন্তু আপুর নিষেধে তাকে কিছু বলা হয় নি। একটুপর আবির ভাইয়ার সাথে আমার আপুর বিয়ে টা সম্পন্ন হয়ে গেলে ঐ বেয়াদবটা আপুকে রেখে সে মোটরসাইকেলে করে একাই চলে যায় আর তার বাবা মা আপুরা আমার আপুকে নিয়ে তাদের বাসায় যায়। যাওয়ার আগে আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলো। অনেক আদরের ভাই ছিলাম আমি। বিয়েতে এসে আমার আপুর ঐ বেয়াদব জামাইটা কিছুই খাইনি বলে আমার মা তার জন্য কিছু খাবার প্যাকেটে করে দিয়ে দিয়েছিলো। যতোই হোক মেয়ের জামাই তো.....
চলবে.....

নির্বাচনের দাবি


নির্বাচনের দাবি 

------------------
Image result for নির্বাচন


মোবাইল আছে ইন্টারনেট নাই 
দিনটা আমার শেষ 

নির্বাচনের এই তামাশা 
দেখছি আমি বেশ।

উন্নয়নের জোয়ারে যখন 
ভাসছে গণতন্ত্র 
মোবাইলে ইন্টারনেট থাকতেই হবে 
একটাই মূলমন্ত্র।

কিসের ভোট কিসের আলাপ 
ইন্টারনেট ফেরত দে 
অলস আমায় বসিয়ে রাখার 
ক্ষমতা দিল কে ?

পড়াশুনা বন্ধ আমার 
বেজায় খারাপ মন 
টুজি থ্রিজি বন্ধ করে 
কিসের নির্বাচন ?

ফেইসবুক আর ইনষ্টগ্রামে 
যায়না লগ ইন করা 
ভোটটা আবার চাইতে এলে 
দূরে ভাগ যা মরা।

ইউটিউবে গান চলেনা 
ভিডিওতে বাফারিং 
ক্ষোভে আমার মনটা ভীষণ 
করিতেছে ফায়ারিং।

এরি মাঝে ফুটানি দেখায় 
ওয়াইফাই ধারি জনগণ 
কেউ পাবে কেউ পাবেনা 
কিসের নির্বাচন ?

টুজি থ্রিজি ইন্টারনেট সেবা 
যদি, নাই দিতে পার 
ঘরে ঘরে ওয়াইফাই সব 
আজকেই বন্ধ কর।

Saturday, December 29, 2018

রহিতের সাথে দেখা করব বলে তাড়াহুরো করে বাসা থেকে...

রহিতের সাথে দেখা করব বলে তাড়াহুরো করে বাসা থেকে বের হতেই মায়ের সাথে খেলাম ধাক্কা । মা কপাল ধরে ওরে মা বলে দিলো এক চিৎকার । আসলে ধাক্কাটা তো আর আস্তে লাগেনি । আমি অপরাধীর মত একমিনিট দাড়িয়ে থেকেই ভৌ দৌড় দিলাম । মা পেছন থেকে বাবার গুষ্ঠি উদ্ধার করবে এটা নতুন কিছু না । মায়ের ধারনা আমার বাবার গুষ্ঠির সবার ধাক্কা দেওয়ার ব্যামো আছে ।মায়ের বিয়ের দিন বাসায় ঢুকতেই নাকি দাদীর সাথে ধাক্কা লেগে বাবার গায়ের উপর পরে গেছিল । সেই থেকে মায়ের এমন ধারনা ।
রহিত আমার একমাত্র গুলুমুলু মানে বয়ফ্রেন্ড আর ফিউচার হাবি । গতরাতে ফোন করে বলল দেখা করতেই হবে জরুরি কথা আছে ।সকাল নয়টায় রহিতের সাথে দেখা করার কথা । এখন নয়টা দশ বাজে পৌছাতে এখনো বিশ থেকে পঁচিশ মিনিট লাগবে । আমি জানি রহিত আমার আগেই আসবে । ওকে অপেক্ষা করাতে আমার বেশ ভাল লাগে । তবে এটা ওর শাস্তিও বটে । প্রেমের প্রথম দিকে একদিন আমাকে দু ঘন্টা অপেক্ষা করিয়েছিল । তার পর থেকে রহিত অপেক্ষা করে আর আমি ইচ্ছা করেই দেড়িতে আসি।
গাড়িতে বসে বোর হচ্ছিলাম । ভাবলাম ফেবুতে নিউজ ফিড ঘুরি আর রহিতের সাথে কথা বলতে বলতে যায় । তাহলে রহিতও বোর হবে না । ফোনটা বের করে ডাটা অন করতেই আমার পাশের সিটে এক আন্টি বসলেন । বসার আগেই কেমন করে তাকালেন । আমি ওদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ফেবুতে নিউজ ফিড ট্রল করতে লাগলাম । রহিত অনলাইনেই ছিল ওকেও নক করলাম । মশাই আমার অপেক্ষা করছেন । ওর সাথে কথা বলছি আর কি একটা বিষয় নিয়ে মিটিমিটি হাসছি । হঠাৎ লক্ষ্য করলাম পাশে বসা আন্টিটা রাগে কিটমিট করে তাকিয়ে আছেন । নিজেই আগ বাড়িয়ে বললাম , আন্টি কোনো সমস্যা ?
উনি রাগি লুক নিয়ে জিগালেন আমি কি করি , কোথায় পড়ালেখা , কোথায় যাচ্ছি ইত্যাদি ইত্যাদি ।
যখন বললাম বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তখনই ওনার আসল রুপ দেখতে পেলাম ।
উনার বক্তব্য ,' আজকালকার মাইয়ারা বেটাছেলের সাথে কথা কইতেও একবার ভাবে না । একসাথে উঠাবসা করতেও কোনো কিছু মনেই করে না । আর পাইছে এক ফোন ..সারাক্ষন তার মধ্যে মুখ গুইজা বইয়া থাকে ..রাস্তা ঘাটে গুরুজনদের তোয়াক্কা তো করেইনা উল্টা প্রেমিকের গায়ের উপ্রে ঢইলা পরে এদের পরিবারের কি শিক্ষা হুহ ' এক নিঃশ্বাসে বলে মুখ সিটকিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো ।
এমনিতে দেড়ি হয়ে গেছে তার উপর উনার এমন কথা শুনে মেজাজ পুরাই টুট টুট উফফ !!!
এদিকে রহিত হাজার বার করে জিগাচ্ছে আর কতক্ষন আর কতক্ষন ? ধুর !
রহিতের উপর অযথায় রাগ করে অফলাইন হয়ে গেলাম তখনি । কিছু বলতেই যাচ্ছিলাম ওই মহিলাকে কিন্তু কিছু বলার আগেই গাড়ি থেকে নেমে গেলেন । অদ্ভুত সকল আন্টিগন । যা মনে আসে তাই বলে দেয় এদের ঘরে কি কোনো ছেলে নেই যারা কোনো মেয়ের বয়ফ্রেন্ড ।
যায় হোক মেজাজটা ঠিক করে গাড়ি থেকে নামলাম।
গিয়ে দেখলাম রহিত আগেই এসে পার্কের একটা ব্রেঞ্চে চুপচাপ বসে ফোনে গেমস খেলছে । পেছন থেকে গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে দিলাম এক চিক্কুর । বেচারা ভয় পেয়ে পরে যেতে লাগছিল হি হি ।
আমার হাসি দেখে রহিত রাগে না ভয়ে তাকালো ঠিক বুঝলাম না । তবে পরিস্থিতি সামলে আনতে আমিই বললাম মহারাজ এত সকালে আমার ডাক কেন পড়ল বলেন তো । রহিত চুপ মেরে আছে তারমানে অভিমান হয়েছে এমনিতে লেইট করেছি তার উপর ভয় দেখালাম । অনেক কষ্টে মশাইয়ের রাগ ভাঙিয়ে আমাকে ডেকে পাঠানোর কারন জানতে পারলাম । উনি আমাকে সারপ্রাইজ স্বরুপ আজ ওনার আম্মিজান ওরফে আমার শাশুমার সাথে সাক্ষাত করাতে নিয়ে যাবেন ।
আমাকে আগে থেকে বললে একটু সাজুগুজু করা যেত এখন যেমন এসেছি তেমনি শাশুমার সামনে হাজির হতে হবে । উনার আম্মিজান নাকি একটু সেকেলে তবে পটাতে পারলে আর কোনো চিন্তা নেয়। তবে অনেক রাগী । রাগ সহজে হয় না আর হলে কমে না । রহিত ওর মাকে বাঘের মত ভয় পায় । আমিও ওর সাথে বাজি ধরেছি শাশুমা কে পটিয়েই ছাড়ব ।
অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ করে ভয়ে ভয়ে বাসায় ঢুকলাম । বাসায় কাজের বুয়া ছাড়া কেউ নেই । রহিতকে খুব ঝাড়লাম আম্মা নেই জেনেও আমাকে নিয়ে আসার জন্য । কাজের বুয়া আমার চেচামেচি শুনে এগিয়ে এসে বলল খালাম্মা একটু বাইরে গেছেন একটু পরই চল আসবে ।
রহিত এবার আমার উপর উল্টো ঝাড়ি দিতে লাগল ,
'কি ভাবো আমাকে হা । আমি এত বাজে যে তোমাকে ফাঁকা বাসায় নিয়ে আসব । ছিঃ ছিঃ এমন ভাবো তুমি আমাকে ? তোমাকে নিয়ে আসায় আমার ভুল হয়েছে ..কথাগুলো বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সামনে থেকে চলে গেল । ধুর আজ কার মুখ দেখে যে উঠেছিলাম । সকাল শুরু হলো ধাক্কা দিয়ে তারপর রাস্তায় পঁচা কথা ..এইরে সে কথা তো ভুলেই গেছিলাম । যাইহোক ওইই মহিলার কথা মনে করে আর মেজাজ বিগরাতে চায় না । এসব ভাবতে ভাবতেই কলিংবেল বেজে উঠল । কেউ আসছে না দেখ আমিই খুলে দিলাম ...খুলে যা দেখলাম মেজাজ পুরোই গরম হয়ে গেল । গাড়ির ওই মহিলা এখানে কি করছে । উনি ভূত দেখার মত আমার দিকে তাকিয়ে আছেন ।
এই যে আন্টি আপনার সমস্যা কি হুমম । গাড়িতে আজাইরা কথা শুনিয়ে আপনার স্বাধ হয়নি আবার এখানে এসেছেন । আপনার ঘরে কি কোনো ছেলে মেয়ে নেই ..তারা কি ফোন ব্যবহার করে না ? তাদের কি ছেলে বন্ধু ..মেয়ে বন্ধু নেই ? কাউকে সুযোগ পেলেই যা খুশি বলে দেন আপনারা । গাড়িতে বলে শখ মেটেনি আবার আমার পিছু ধরে আমার হবু শশুর বাড়ি চলে এসেছেন । এক নিঃশ্বাসে বলে সমস্ত রাগ ঝাড়লাম ।
উনি তবধা খেয়ে আমার পেছনে কিছু দেখছেন । তাকিয়ে দেখলাম রহিত রসগোল্লার মত চোখ করে একবার আমার দিকে আর একবার ওই মহিলার দিকে তাকাচ্ছে । আমি রেগে গিয়ে ওকে বললাম ' জানো আজ গাড়িতে উনি যা নয় তাই বলেছেন । আবার এখানেও এসেছেন আমাদের অনুসরন করে । কত বড় সাহস দেখছো ??
রহিত আমার কথা তোয়াক্কা করে আমতা আমতা করে আস্তে করে বলে উঠল ''মা তুমি কখন এলে"
বাকিটা শুনিতে চাহিয়া নিজে লজ্জা নিবেন না প্লিগ ।

নতুন নতুন গল্প পেতে আমাদের সাথেই থাকুন 
গল্পটা আপনার কাছে কেমন লাগছে সেটা কমেন্ট করে জানাবেন
ধন্যবাদ
youtube

বিয়ের তিনমাস পেরিয়ে গেছে তার পরের গল্প

বিয়ের তিনমাস পেরিয়ে গেছে।
,
আমার বৌ বলেছিলো রোজ সকালে
তাকে ডেকে তুলতে হবে
আমি সেটাই করি তবে ঠিক এভাব----
আমি রোজ সকালে ঘুম ভেঙে দেখি ও
আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা
রেখে ঘুমাচ্ছে। ওর বাচ্চাদের মতো
করে থাকা মুখটা দেখে আমি একটু মৃদু
হেসে দেই। তারপর মিষ্টি করে ঘুমন্ত
পরিটাকে একটা চুমা দেই। ও আমার
সেই ঠোটের স্পর্শ অনুভব করতে পেরে
একটু নড়েচড়ে আমাকে আরো শক্ত করে
জড়িয়ে ধরে বলে, উমমমম!!!! না আরেকটু
ঘুমাবো।
আমি তখন দুষ্টামি করে ওকে সুড়সুড়ি
দেই। ব্যস অমনি লাফিয়ে উঠেই
আমারে মাইর শুরু করে। কত আনন্দের!!!,
সকালটা আমাদের দুষ্টু মিষ্টি
ভালোবাসা দিয়েই শুরু হয়।
,
বলেছিলো রান্নাঘরে আলগা
পিরিত যেন না দেখাই । আরে ভাই
আমি কি দেখাবো সেতো নিজেই
এখন আলগা পিরিত দেখায় । আমি
দাড়িয়ে থাকি আর সে চুলায়
তরকারী বা ভাত টা তুলে দিয়ে
অমনি এসে আমার হাতদুটো টেনে
নিয়ে ওর কোমড়ে রাখে। আর তারপর
আমার শূন্য বুকটাতে আশ্রয় নেয়।
আমি বলি যে, যাও, তরকারী পুড়ে
যাবে
সে বলে, পুড়ুক একদিন পোড়া তরকারীই
খাবে। কি হয় খেলে? আমার এখন
তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকতে ইচ্ছে
করছে।
,
কি পাজি মেয়েটা!!!
,
বলেছিলো তিনবেলা নিজের হাতে
খাইয়ে দিতে।
সে কারণে আমি এখন অফিসে টিফিন
নেইনা। লাঞ্চ আওয়ারে এসে ওকে
নিজের হাতে খাইয়ে দিলে তবেই
খায়। নয়তো সারাটা দুপুর না খেয়ে
থাকে।
,
বলেছিলো শুক্রবার দিনটায় তার
সাথে বাসার সব কাজ করতে হবে।
সত্যিই তাই। এই পাজি মেয়েটা ইচ্ছে
করেই সারা সপ্তাহের কাজ একদিনে
জমিয়ে রাখে। তারপর আমাকে দিয়ে
করায়
মাঝে মাঝে আমার যখন বিরক্ত লাগে
আমি রেগে গিয়ে চেচিয়ে উঠি। ও
দৌড়ে এসে আমার শুকনো ঠোটদুটো ওর
ঠোট দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে বলে,
রাগেনা সোয়ামি। আমি না তোমার
আদরের বউ। আমি না থাকলে তখন
( বাকিটা আর বলতে দেইনা । ওর মুখটা
চেপে ধরে বলি তুমি থাকবে
সারাজীবন আমার পাশে থাকবে)
,
আমার বৌ পাগলি বলেছিলো সে
কাদলে তার সাথে আমাকেও কান্না
করতে হবে।
কান্না করবো কি? এখন তো ওকে
কখনো চুপচাপ গোমড়া মুখো হয়ে
থাকতে দেখলেও আমার চোখে পানি
চলে আসে। মাঝখান থেকে ও নিজেই
এসে আমার সাথে কান্না জুড়ে দিয়ে
বলে,আরে বোকা ছেলে কাদছো
কেন? আমি তো এমনিতেই চুপ করে
রয়েছি
,
ওর আবদার ছিলো যেদিন ওর মন ভালো
থাকবে না সেদিন আমি অফিস না
গিয়ে ওর পাশে বসে থাকবো। আমি
এখন এমনিতেই মাসে৩-৪ দিন অফিস
বাদ দিয়ে বৌয়ের সাথে রোমান্স
করি। বরং বৌটা নিজেই প্রতিদিন
আমাকে থেলে থেলে অফিসে
পাঠায়
,
পাগলি বলেছিলো, মেয়ে তো দূর
কোনো বুড়ির দিকেও
তাকাতেপারবো না।
ও ছাড়া অন্য মেয়ের দিকে
তাকাবোই বা কিভাবে। আমি তো
যে মেয়েটাকে দেখি মনে হয় এর
থেকে তো আমার বউই অনেক সুন্দরী।
খামোখা এসব মেকাপওয়ালির দিকে
তাকিয়ে আমার পাগলি বৌয়ের
ভালোবাসা হারাবো কেন
,
পাগলি বলেছিলো সে না খেলে
আমাকেও না খেয়ে থাকতে হবে।
হা হা হা সত্যি আমি ক্ষিদে সহ্য
করতে পারিনা ।
কিন্তু এখন ক্ষিদে লাগলে খাওয়া তো
দূর বউ না খেয়ে আছে শুনলে আমার
পুরো পৃথিবী ওলট পালট হয়ে যায়।
অভিমান করলে ওর হাসিমুখ টা না
দেখা অবধি আমার গলা দিয়ে ভাত
নামেনা। ভালোবাসা মানুষকে
পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।
,
একবার ওর জ্বর হইছিলো। কিছুই খেতে পারছিলো না ।
সত্যি বলতে ওই সময়টার কথা আমি মনে করতে চাইনা।
আমার বৌটা খেতোনা। কোনো আবদার করতো না।
আমার সাথে দুষ্টামি করতো না। শুধু চোখ দুটো মেলে
আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলতো, দেখো আগামীকাল
সকালেই আমি সুস্থ্য হয়ে যাবো।
আমি পুরোটা রাত ওর মাথায় হাত বুলাতাম। আমার বুকে
ওর মাথাটা রেখে চুপচাপ কান্না করতাম। ও বারবার
কাদতে নিষেধ করতো। আমার বৌটা ঠিক যতোটুকু খাবার
খেতো আমিও ততটুকুই খাবার খেতাম। কারণ ওর কষ্ট
টাকে আমি নিজে অনুভব করতে চেয়েছিলাম। ও রাগ
দেখিয়ে বলতো, তুমি যদি খাবার না খাও তাহলে আমি
ভালো হবোনা কিন্তুু। দেখো আমি মরে যাবো।
আমি ওকে সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরে কেদে দিতাম
,
পাগলিটা বলেছিলো রেগে গেলে ও আমাকে ঘরের
দড়জা লাগিয়ে পেটাবে।
সত্যি বলতে এই তিনমাসে সেই সময়টা এখনো আসেনি।
আর মনে হয়না আসবেও। কারণ আমার ওপরে ওকে কখনো
রাগ দেখাতে দেখিনি।যেটা দেখেছি সেটা অভিমান।
,
ও বলেছিলো রোজ চাদনি রাতে ওকে ছাদে নিয়ে গিয়ে
গল্প শোনাতে হবে
এখন চাদনি হোক বা আধার রাত । আমি প্রতিরাতেই
ওকে ছাদে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তুু লক্ষ্মী বৌ আমার
নিজেই বলে, থাক চলো ঘুমাবে।কাল সকালে তোমার
কাজ আছে।
,
বউয়ের আবদার ছিলো যখন যেটা খেতে চাইবে
তখন তাকে সেটাই এনে দিতে হবে। তবে তার খাবারের
আবদারগুলো বড়ই অদ্ভুত
এই যেমন : এক গ্লাস পানি হাতে এনে বলবে
-- শুনোনা আমার ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে (বৌ)
-- হ্যা তো পানি খাও (আমি)
-- না আগে তুমি অর্ধেক খাও
-- আমি খাবো কেন?
-- কারণ স্বামীর এটো করা জিনিস বৌ খেলে
ভালোবাসা বাড়ে। বুঝেছো...
এরকম বৃষ্টির দিনে বলবে বেশি করে ঝাল দিয়ে মুড়ি
মাখিয়ে দাও।
মুড়ি মাখিয়ে দিলে সেই মুড়ি খাবে আর আমাকে
কিলাবে এসব বলে, এতো ঝাল দিছো কেন ইতর? দিতে
বলছি বলেই এতো ঝাল দেবে নাকি?. তেল হয়নি কেন?.
এভাবে কেউ মুড়ি মাখায়?
,
ওর শেষ আবদার টা ছিলো ১০০ বার আলাভু আর ২০০ টা
চুমা দিতে হবে রোজ।
সত্যি বলতে আগে মনে হতো এটা সম্ভব না। কিন্তুু যেদিন
থেকে বউকে ভালোবাসতে শিখেছি এই মায়াবিনীর
মায়ায় জড়িয়ে গেছি সেদিন থেকে শুধু মনে হয়েছে, এই
পাজিটা ওইদিন ১০০ বারের বদলে ৫০০ বার আলাভু বলতে
বলেনি কেন? ১০০ ০ টা চুমা চাইলোনা কেন?
আমি এখন বৌকে যখনই সুযোগ পাই তখনই চুমা দেই। মাঝে
মাঝে ও নিজেই বিরক্ত হয়ে রেগে যায় । তখন আমিও
অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকি। শয়তান বৌটা
এসে টুক করে আমার ফোলা গালে একটা চুমা দিয়ে হিহি
করে হেসে ওঠে আর বলে, আমার সোয়ামি রাগলে তাকে
পুরো কার্টুনের মতো লাগে।
,
এইতো আমাদের বিবাহিত জীবন। দিন দিন তার আবদার
বেড়েই চলেছে আর আমিও তার সব আবদার যথাযথভাবে
মিটিয়ে নতুন কোনো আবদারের জন্য অধীর আগ্রহে
অপেক্ষা করি।
,
কারণ আমি জানি এই শয়তান, হাড় বজ্জাত মেয়েটার
প্রতিটা আবদারের মাঝে লুকিয়ে আছে আমার প্রতি
তার অন্তহীন ভালোবাসা।
,
★ সমাপ্ত ★
প্রতি দিন নতুন গল্প পেতে আমাদের সাথেই থাকুন
এবং কমেন্ট করে জানাবেন লিখাটা কেমন লাগছে
ভুল হলে ক্ষমা করবেন। 
youtube