Sunday, December 30, 2018

গল্পঃআপুর বিয়ে (সত্য ঘটনা অবলম্বনে) পর্বঃ০৩

গল্পঃআপুর বিয়ে (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
পর্বঃ০৩
ভাইয়া চলে গেলে একটুপর এশার নামাজের আযান দিলে আব্বু নামাজে চলে যায়। তখন আমি আর মা বসে আছি মায়ের চোখ দুটো ছলছল করে উঠতে দেখলাম। পরক্ষনেই দেখতে পেলাম মায়ের চোখের কোণে পানি। অবন্তী আপু সবার অনেক আদরের ছিলো। আমাদের একমাত্র বোন ছিলো অবন্তী আপু। ভাইয়া বাবা মা সবাই আপুকে খুব আদর করতো। এতো বড়ো হওয়ার পরও আপু কলেজ থেকে ফিরলে প্রতিদিন দুপুরের খাবারটা মা নিজ হাতে আপুকে খাইয়ে দিতো। বাবা খেতে বসলেই আপুর দিকে এক লোকমা ভাত এগিয়ে দিয়ে বলতেন নে মা শ্বশুরবাড়ি চলে গেলে তো আর খাইয়ে দিতে পারবো না। আর তখন আপু খুব রাগ করতো আর বলতো আব্বু আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।
এই স্মৃতিগুলো ভাবতেই আমার চোখেও জল এসে গেছে। ঐ দিকে মা বিড়বিড় করে বলছে আমি বলেছিলাম ওদের আংটি ফেরত দিয়ে দে। এই ছেলেকে আমার আগেই সুবিধার মনে হয় নি। কিন্তু আমার মেয়ে আমার কথা শুনে নি। এখন বুঝুক মজা বলেই মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঐ রাতে আর আমাদের কারোরই রাতের খাবার খাওয়া হয় নি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মা আপুর খোঁজ নেয়ার জন্য আবির ভাই এর (আপুর স্বামী) ফোনে ফোন দেয়। কয়েকবার ফোন দিলে তার ফোনে রিং হওয়ার পরও সে ফোন রিসিভ করছে না। এইদিকে আপুর চিন্তায় মায়ের করুণ দশা অন্যদিন মা সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নাস্তা রেডি করতে বসে। কিন্তু আজ যেনো মা তা ভুলেই গেছে। একটুপর আপুর স্বামীর ফোন থেকে মায়ের ফোনে ফোন আসলে ফোনের ওপাশ থেকে আপুর গলা শোনা যায়। আপু মাকে আশ্বস্ত করে যে আপু ভালো আছে। আপুর ফোন পেয়ে মা কিছুটা শান্তি অনুভব করে।
তার দুইদিন পর আপু ফোন দিয়ে আমাকে আপুর শ্বশুরবাড়ি আসতে বলে। আর আপু মাকে দুলাভাই এর পছন্দের খাবারের কথা বললে মা তা রান্না করে দেয় এবং তা নিয়ে আমি আপুর শ্বশুরবাড়ি যাই। যদিও আপুর শ্বশুরবাড়ি আসতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ আমি তাদের বাসায় আগে কখনো আসিনি বলে চিনতাম না। আমাকে আপু ফোনে ঠিকানা দিলে ঐ ঠিকানা অনুযায়ী রাস্তায় কয়েকজনকে জিগ্যেস করে আপুর শ্বশুরবাড়ি আসি। আপুর শ্বশুরবাড়ি ঢোকার আগে বাড়িটা কেমন জানি ভুতুড়ে টাইপের মনে হয় আমার কাছে। বাড়ির চারপাশে টিনের বেড়া আর গেইটটাও যথেষ্ট পুরোনো আর গেইট ভেতর থেকে লক করা। আমি কয়েকবার গেইটে নক করলেও ভেতর থেকে কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না। আমার তখন খুব রাগ হচ্ছিলো আর আমি কেমন যেনো অপমান বোধ করছিলাম। কারণ সবসময় দেখতাম প্রথম যখন কোন শালা তার দুলাভাই এর বাড়িতে আসে তখন দুলাভাই তার শালাকে রাস্তা থেকে বাড়িতে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর আমার দুলাভাই এটা ভাবতেই খুব রাগ হচ্ছিলো। তখন মন চাইতেছিলো গেইটে জোরে একটা লাথি মেরে বাড়ি ফিরে যায়। এতো কিছু নিয়ে আসলাম ঐ দুলাভাই কে খাওয়ানোর জন্য আর ঐ ব্যাটা আমাকে এগিয়ে নিতেও আসে নি এমনকি একটাবার ফোন দিয়ে খোঁজও নেয়নি আমি কিভাবে আসতেছি,কতোটুকু আসছি। আমার মা বাবা কেই ফোন দেয় না আর আমাকে!
তখন যে আপুকে ফোন দিয়ে গেইট টা খুলতে বলবো ঐ রাস্তাও তো নেই কারণ ঐ ব্যাটা তো আমার আপুকে ফোন ব্যবহার করতে দেয় না। আর দুলাভাই এর ফোন নাম্বারও আমার কাছে নেই। তখন আর কোন উপায় না পেয়ে মাকে ফোন দিয়ে বললাম দুলাভাই এর ফোনে দিয়ে বলতে গেইট খোলার জন্য আমি বাইরে দাড়িয়ে। মাকে ফোন দেয়ার একটু পর আপু গেইট খুলে আমাকে নিতে আসে। আপু আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বললো ভাই তুই ভালো আছিস তো?
-হ্যা আপু ভালো, তুমি কেমন আছো?
-হ্যা রে ভাই তোদের দোয়ায় ভালোই আছি...
খেয়াল করলাম আপু এই কয়দিনে অনেক শুকিয়ে গেছে আর আপুর সেই সুন্দর মুখখানি কেমন জানি চুপসে গেছে। আপুর চুপসে যাওয়া মুখখানি দেখেই বুঝতে পারছি যে আমার আপু কতো ভালো আছে।
আপু আমাকে আপুর রুমে নিয়ে গেলো রুমে প্রবেশ করে দেখলাম আমার দুলাভাই শুয়ে আছেন।
আমি দুলাভাইকে সালাম দিয়ে কেমন আছে জিগ্যেস করলাম সে ভালো আছি উত্তর দিয়ে আমি কেমন আছি জিগ্যেস করলো। এতোটুকুই আমার তার মাঝে কথোপকথন হয়। সে একবারও জিগ্যেস করলো না আব্বু আম্মু ভাইয়া কেমন আছে। ভাইয়ার কথা না জিগ্যেস করলেও আব্বু আম্মুর কথা তো জিগ্যেস করতে পারতো কিন্তু সে তাও করে নি। একটুপর আপু আমাকে নাস্তা খেতে দেয় আমি বেশি না শুধু একটা বিস্কুট মুখে দিলাম। রুমে প্রবেশ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত আপুর শ্বশুর শাশুড়ি এই দুইজনের কাউকেই আমি দেখতে পাই নি। আর আমার দুলাভাই তখনো শুয়ে আছে তখন সে হাতে রিমোট নিয়ে রিমোট চাপতে লাগলেন। বিস্কুট খাওয়া শেষে একগ্লাস পানি খেয়ে আমি আপুকে বললাম যে আপু আমি চলে যাবো। তখন আপু আপুর শাশুড়িকে ডেকে বলে যে আম্মা শাকিল আসছিলো চলে যাচ্ছে। আপু যখন আপুর শাশুড়িকে ডাকছিলো তখন আমার খুব অবাক লাগছিলো যে ওনি যেহেতু পাশের রুমে সুতরাং আমি যে আসছি তা তিনি অবশ্যই দেখছেন। আর না দেখলেও পাশের রুমে থেকে আমার গলার আওয়াজ শোনার কথা কারণ আমি এতোটাও আস্তে কথা বলিনি যে পাশের রুমে থেকে শোনা যাবে না। আপু ডাক দিলে ওনি আসলেন আমি ওনাকে সালাম দিলে তিনি সালামের উত্তর দিয়ে আব্বু আম্মু কেমন আছে জিগ্যেস করলে আমি উত্তর দিয়ে ওনি কেমন কেমন আছে তা জিগ্যেস করি। তিনি ভালো আছি বলে দুলাভাইকে ডাকে দিয়ে বললেন "আবির তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আয়"।আর শাকিল তুমি আবার এসো কিন্তু.....
আমি ওনার কথা শুনে অবাক হচ্ছিলাম যে কারো বাড়িতে যদি একটা অপরিচিত মানুষও আসে তাহলেও তো তাকে মুখের কথা হলেও বলে যে আজকে থেকে যাও। আর আমার আপুর শ্বাশুড়ি আমাকে তাও বললেন না!
তখন দুলাভাই শোয়া থেকে উঠে আমাকে বললো চলো আবার এসো আর আব্বা আম্মাকে আসতে বইলো। আমার দুলাভাই এর কথা শুনে আমি আবারো অবাক হয়েছিলাম কারণ সে আমার আপন বোনের জামাই হয়েও বলেনি যে শাকিল আজরাতটা থেকে যাও। আমি এমনিতেও থাকতাম না কারণ এই ভুতুড়ে পরিবেশে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না। তখন দেখলাম যে আপু পাশেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইছে। আর আপুর চোখদুটো যে ছলছল করছে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আর এটাও বুঝা যাচ্ছে যে অনেক কষ্ট করে আপু তার চোখের জল আটকিয়ে রেখেছে। তখন আপু আমার কাধে হাত রেখে বললো ভাই এখন আর দেরি করিস না তাহলে তোর বাসায় পৌছাতে রাত হয়ে যাবে। আমি আর কিছু না বলে পা বাড়াই আপু গেইট পর্যন্ত পেছন পেছন আসে এবং পেছন থেকে বলে বাড়ি পৌঁছে ফোন দিবি কিন্তু।
আমি আর পেছনে না তাকিয়ে আচ্ছা বলে যখন গেইটের বাইরে পা রাখবো তখন দুলাভাই আপুকে বলে যে আমি শাকিলকে আগায় দিয়ে আসি। তখন আমি বলি যে না ভাই লাগবে না আমি একাই যেতে পারবো। তখন আমার দুলাভাই আমাকে আবারো অবাক করে দিয়ে বলে আচ্ছা তাহলে তুমি যাও।
আমি তখন বাড়ির পথে রওনা করি আর আমার খুব রাগ হচ্ছিলো আর মনে মনে ভাবছিলাম "এ কেমন পাষাণ মনের মানুষের কাছে আমার আপুকে বিয়ে দিলাম".....
চলবে....

No comments:

Post a Comment